Friday, August 8, 2008

আমার ইচ্ছে হয়......

ইস, আমি যদি পাখি হতাম! যদি হতাম সাগরের ঢেউ! হতাম যদি আকাশের তারা! যদি পেতাম আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ যার মাধ্যমে আমার মনের সব ইচ্ছেগুলি পূরণ করতে পারতাম!

না, এধরনের কোন অবাস্তব ইচ্ছে আমার মনের মধ্যে উঁকি ঝুঁকি দেয় না। একজন মুসলিম মেয়ের যেসব ইচ্ছে থাকার কথা আমি একজন মুসলিম মেয়ে হিসেবে আমারও সেইসব ইচ্ছে আছে । আর তা বাস্তব, কেননা এইসব ইচ্ছেগুলিই একসময় মুসলিম মেয়েরা পূরণ করতে পারত।

আমার ইচ্ছে হয় যখন মিরপুর স্টেডিয়ামে ভারত পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ হয় তখন স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখি। আমাদের দেশের যে অবস্থা তাতে সাহস পাই না। কারণ একটা শ্রেণী আছে যারা স্টেডিয়ামে যায় মেয়েদের সাথে ইটিস পিটিস করতে অথবা অন্য কোন ধান্দা নিয়ে ।

অথচ রাসূল (স) এর যুগের মেয়েরা মাঠে গিয়ে খেলা দেখেছেন। হযরত আয়েশা (রা) রাসূল (স) এর সাথে মাঠে গিয়ে বর্ষা ও ঢাল খেলা দেখেছেন । অথচ এই আধুনিক যুগে আমি এত বড়ই এক ভাগ্যবতী মেয়ে যে স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখতে পারি না।

আমার ইচ্ছে হয় সিনেমা হলে গিয়ে বড় পর্দায় সিনেমা দেখি। কিন্তু সেখানকার অবস্থাও একই। তাছাড়া যেসব অশালিন ও বেহায়াপনা সিনেমা দেখান হয় তা আমি একজন মুসলিম মেয়ে (যার বিবেক আছে ভাল মন্দ নির্ধারণ করার) হিসেবে কিভাবে দেখব?

আমার ইচ্ছে হয় দুশ্চিন্তা মুক্ত মনে রাস্তা ঘাটে চলা ফেরা করব। আমার মোবাইল, টাকা পয়সা পকেটমার হওয়ার ভয় থাকবে না। ব্যগের চেনে হাত দিয়ে থাকতে হবে না। পাবলিক বাসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাসায় ফিরার পথে প্রায়ই ছেলেদের পাশে বসতে হয়। এসময় এ সামান্য রাস্তা যে আমার কাছে ক-তো- দূরত্ব মনে হয়! সব সময়ই দুশ্চিস্তায় থাকতে হয়।

অথচ রাসূল (স) এর জমানায় এমন ছিল যে, তিনি মদিনা থেকে বলেছিলে-আজ এখান থেকে দক্ষিণে হাজরা মাউত পর্যন্ত যদি কোন সুন্দরী যুবতী মেয়ে গা-ভর্তি বহু মূল্যবান জেওর-গয়না নিয়ে একা একা পায়ে হেটে যায় তবু তার দিকে ফিরে তাকানোর মতো কোন বদ লোক এ আরব জাহানে আর নেই।

আমার ইচ্ছে হয় ঈদের দিন যখন ছেলেরা ঈদের নামাজ পড়তে যায় তখন আমিও যাই। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও মসযিদে গিয়ে পড়তে ইচ্ছে হয়। কিন্ত ইসলাম সম্পর্কে ছেলে মেয়ে সবার পরিপূর্ণ ধারণা না থাকলে একসাথে নামাজ পড়াও বিপজ্জনক।

অথচ রাসূল (স) মেয়েদের ঈদের দিন ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়াড় জন্য অ-নেক তাগাদা দিয়েছেন। সেসময় মেয়েরা পাচ ওয়াক্ত নামাজও মসজিদে গিয়ে পড়তে পারত।

আমার ইচ্ছে হয় আমার ভাবনাগুলো ছেলে মেয়ে সবার সাথে share করব। পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করব। অন্যরাও আমার সাথে share করুক সেটাও চাই। কিন্তু মেয়েদের সাথে ংযধৎব করতে পারলেও ছেলেদের সাথে পারি না। কারণ ছেলেদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা অনেকেই মেয়েদের মর্যাদা দিয়ে কথা বলে না। অনেকে তো আবার মনের মানুষই ভেবে বসে।

অথচ রাসূল (স) এর জমানায় আরাফাত দিবসে একদল লোক তাদের সামনে রাসূল (স) এর রোজা রাখার বিষয় নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করল।এসময় উম্মুল ফযল (মহিলা) নিশ্চিত করলেন যে তিনি আজ রোজা রাখেননি। এভাবে মেয়েরা ছেলেদের সাথে বিতর্কও করেছেন।
রাসূল (স) এর কাছে ছেলে মেয়ে শিখতে যেত। আয়েশা (রা) সহ রাসূল (স) এর অন্য স্ত্রীদের কাছে পুরুষ সাহাবীরা বিভিন্ন বিষয়ে জানতে ও পরামর্শ করতে গেছেন।

আমার ইচ্ছে হয় আমার যদি কাউকে পছন্দ হয় তাহলে তার সামনে গিয়ে তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিই। কিন্তু ভয় হয় যদি কেউ বলে বেহায়া অথবা ভাবে নিশ্চয় প্রেম করত (যদি আমার প্রস্তাবে বিয়ে হয়)! কিন্ত প্রেম আর সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেয়া তো এক কথা না। প্রেম ইসলামে নিষিদ্ধ (দ্র: সূরা নিসা :২৫)।

অথচ রাসূল (স) জুয়াইরিয়াকে দেখে পছন্দ করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এক মহিলা সরাসরি রাসূল (স) কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
আমার ইচ্ছে হয় স্মৃতি রার জন্য আমার বিয়েতে ভিডিও করি। কিন্তু ভিডিওর কথা শুনলে যেভাবে সব সৌন্দর্য্য প্রদর্শন করার জন্য উঠে পড়ে লাগে তাতে আর ইচ্ছে হয় না। অথচ পর্দা রা করেও একটা বিয়ের অনুষ্ঠান অনেক সুন্দরভাবে করা যায়।আর ছেলে মেয়ে উভয়ের পর্দা না করার ফলে কিভাবে একটা সমাজকে ধর্ষণ, জেনা, ব্যাভিচার আকড়ে ধরছে তা আমরা পাশ্চাত্যের দিকে তাকালে সহজেই বুঝতে পারি।আর পাশ্চাত্যের সবকিছুই যখন প্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ছে আর এগুলো ছড়াতে কতন। তার আলামত তো ইতোমধ্যে শুরু হয়েই গেছে।

আমার ইচ্ছে হয় কেউ অন্যায় করলে তার অন্যায়টা ধরিয়ে দিই (আমার জ্ঞানের সাধ্যের মধ্যে)। আমার অন্যায়টাও ধরিয়ে দিক সেটাও চাই। কিন্তু অন্যায় ধরিয়ে দিলে সম্পর্ক খারাপ হয়, মানুষ ভুল বুঝে।

অথচ রাসূল (স) এর যুগে ছেলে মেয়ে একে অপরকে ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ করত। সূরা তওবার ৭১ নং আয়াতে তো সে কথাই বলা হয়েছে। একবার খলিফা ওমর (রা) এক মজলিশে মোহরানা নির্ধারণ করার কথা বললে পিছন থেকে এক মহিলা এর প্রতিবাদ করে বললেন আলাহ ও তার রাসূল (স) যেটা করেননি আপনি তা করতে পারেন না। এটা মেয়েদের অধিকার (একজন ছেলে তার সামর্থ অনুযায়ী যত বেশি ইচ্ছে মোহরানা নির্ধারণ করতে পারে)। তখন ওমর (রা) বললেন, খলিফা ওমর ভুল বলেছেন ওই মহিলা ঠিক বলেছেন। এভাবে একজন সাধারণ মহিলা খলিফার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করলেন এবং তার সিদ্ধান্ত গৃহিত হল। আথচ আমাদের দেশে.................

আমার ইচ্ছে হয় হাসি তামাশা মশকরা আনন্দ-ফুর্তি করব তবে তা হবে শিক্ষণীয় ও বাস্তবসম্মত। যে আনন্দ-ফুর্তি অর্থহীন আলতু-ফালতু তা আমার ভাল লাগে না। তাতে শরীক হতেও ইচ্ছে হয় না। আর তাতে শরীক হতে না পারলে আমি হয়ে যাই unsmart, হয়ে যাই ancient.

অথচ রাসূল (স) বিভিন্ন সময় সাহাবীদের সাথে মশকরা করেছেন। একবার এক বুড়ি রাসূল (স) এর কাছে এসে বেহেস্তে যাওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, কোন বুড়ি তো বেহেস্তে যেতে পারবে না। তখন বুড়ি কাঁদতে কাঁদতে চলে যাচ্ছিল, এবার তিনি বললেন সকল বুড়িই যুবতী হয়ে বেহেস্তে প্রবেশ করবে। তাছাড়া সেসময়ের মেয়েরা বিয়েতে গান গেয়ে ও দব বাজিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করত। তবে সবই ছিল সীমার মধ্যে।

একজন মুসলিম মেয়ে হিসেবে আমার ইচ্ছে হয় সকল বিধবা ও অসহায় মেয়ে যাদের পরিবার থেকে ভরণ পোষণ নেয়ার সামর্থ নেই তাদের দায়িত্ব যদি রাষ্ট্র নিত! কেন একটা মেয়েকে পেটের দায়ে বাড়ি বাড়ি কাজ করতে হয়? ঝুকিপূর্ণ কাজ করতে হয়? কেনইবা তাদের ভিাবৃত্তির পথ বেছে নিতে হয় ? কেন ছেলে মেয়েদের কাজের ধরণ ও তাদের দায়িত্ব কর্তব্য পৃথক করা হয় না যেখানে তারা শারিরীক ও মানসিকভাবে এক নয়। ইসলাম তো মেয়েদের ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিতে বাধ্য করেনি। তারা কাজ করবে নিজ ইচ্ছে অনুযায়ী। পেশা বেছে নিবে কল্যাণের জন্য। রাসূল (স) এর যুগে এমনটিই হতো।

আমার আরো অ-নেক ইচ্ছে আছে তবে যেটা দিয়ে শেষ করতে চাই তাহলো আমার দেশের মানুষ যদি ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা করত, ইসলাম সম্পর্কে জানত, বুঝত ও মানত তাহলে আমার সব ইচ্ছেগুলি পূরণ হত। কারণ আরবের মানুষ যখন পুরোপুরি ইসলাম মানত না তখন সে সময়ের মেয়েদেরও আমার মত ইচ্ছেগুলি অপুরণই থাকত। কিন্তু যখন সবাই দলে দলে ইসলাম গ্রহন করল ও পুরোপুরি ইসলাম মেনে চলল তখনই মেয়েরা এই ইচ্ছেগুলি পুরণ করতে পারল।

7 comments:

আশরাফ রহমান said...

লেখাটা পড়ে খুব ভাল লাগলো। মনের ভেতর নানা রকম ইচ্ছে জাগতেই পারে কিন্তু তা বাস্তবায়ন করার আগে বিবেক, ধর্ম, পরিবেশ সব কিছুই মাপকাঠিতে যাচাই করতে হবে।

যাযাবর said...

লেখাটা পড়ে খুব খুব মজা পেয়েছি। আই লভ ইট! কারন এই ইচ্ছেগুলো আমারো খুব ইচ্ছে হয়। আই রিয়েলী এপ্রিশিয়েট ইট।

মাহমুদ রহমান said...

লেখাটা ভাল লেগেছে। ইসলাম উন্নত নৈতিক চরিত্রের শিক্ষা দেয়। এই জায়গাটাতে কমপ্রোমাইজ করা চলবে না। ইসলামের শিক্ষা থেকে কখনও নিজেকে মাহরুম করা যাবে না। কিন্ত, বাস্তবে আমরা সেটা না করে মানুষের জীবনটাকে সংকীর্ণ করার চেষ্টা করি। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে এক্ষেত্রে ধর্মকেই ব্যবহার করি। রাসুল সা. এর যতগুলো কাজ তারমধ্যে অন্যতম একটি কাজ ছিল পরিশুদ্ধ করা।

লেখা থেকে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরি,
আয়েশা রা. খেলা দেখতে রাসুল সা. এর সাথে গিয়েছেন... একা একা যাননি।

মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী পরস্পর বন্ধু হতে পারে। তবে এই বন্ধুত্ব কিন্তু পশ্চিমাদের দেখানো বন্ধুত্ব নয়।

ইসলামী সমাজ না থাকার কারণে আমরা পুরুষরাও যথেষ্ট পরিমাণ স্বাধীন হতে পারি না। যারা ইসলাম জানেন, বুঝেন তারা ইসলামের অভাবটা হৃদয় দিয়েই উপলব্ধি করতে পারেন।

এরকম লেখা আরও চাই।

বিসমিয়া said...

সবাইকে অ-নেক ধন্যবাদ। সবাই বলে আমাদের দেশে নাকি ৮৫% মুসলমান বাস করে। আমার মনে হয় ৮৫% নয় ১৫% মুসলমান বাস করে। যেদিন এ ১৫% মুসলমান ৮৫% এ রূপ নিবে সেদিনই আমার,যাযাবরসহ অন্যান্য মুসলিম মেয়েদের ইচ্ছেহুলি পূরণ হবে। মনে হচ্ছে মাহমুদ রহমান ও আশরাফ ভাই আপনাদেরও মনের ভেতর অনেক ইচ্ছে আছে!সবাই মুমিন হলে সবার সব সত ইচ্ছেগুলিই পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ। ""যারা ইসলাম জানেন, বুঝেন তারা ইসলামের অভাবটা হৃদয় দিয়েই উপলব্ধি করতে পারেন""। কথাটা খুবই ভাল লাগর।

নিঝুম said...

লেখাটা খুব ভালো লাগলো ।

ইচ্ছাগুলো পুরন করার মত পরিবেশ হোক খুব শিঘ্রী । সোনালী সে দিনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছি.........

ochena_pothik said...

khub valo laglo lekhata pore. moner icchegulur shohoj shorol prokash..

shondhabati said...

lekhata onek onek bhalo legeche apu... asholei koto choto khato okkhomota...