সাবিহা শান্ত শিষ্ট একটি মেয়ে। পড়াশুনায় ভাল। সবাই তার প্রশংসা করে। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। পর্দাও করে। যেনতেন পর্দা নয়। বোরখা পরে ও মুখও ঢাকে। এতগুলো গুণ; সবই পেয়েছে তারFamily tradition থেকে। স্কুল কলেজে পড়াশুনার এত চাপ যে সে কোরআন, হাদিস ও ইসলাম সম্পর্কে খুব একটা পড়াশুনা করতে পারেনি। তাতে কি হয়েছে? কোরআন হাদিসের জ্ঞান না থাকলেও সে অনেক ভাল একটা মেয়ে।
সাবিহা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর মানুষের মুখে এখানকার ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা ও পরিবেশ সম্পর্কে ভাল মন্দ অনেক কিছু জানতে পারে। সে নিজেও অনেককিছু অবলোকন করতে থাকে। অনেকে তাকে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছ Broad mindedহও। ছেলেমেয়ে সবার সাথে ভাল সম্পর্ক রাখবে এতে পড়াশুনায় অনেক সাহায্য পাবে। Teacherদের সাথে কথা বলবে। আবার তাকে এ কথাও বলা হল যে একজন বিশেষ কাউকে দেখে রেখ তাহলে পড়াশুনায় সাহায্য পাবে আবার মনের অনেক কথা Shareকরতে পারবে ইত্যাদি আরো অনেক কিছু।
যাইহোক সাবিহা ভাল ছাত্রী হওয়ার সুবাদে খুব শীঘ্রই হলে সীট পেয়ে গেল। হলে থাকার ফলে সে Family tradition এর চেয়ে HallTraditionএ বেশি ঝুঁকতে থাকল। ভাল কথা। Family tradition এর চেয়ে যদিHall tradition ভাল হয় তবে Hall traditionএ ঝুঁকতে দোষ কি?
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সাবিহাকে যেসব কথা বলা হয়েছিল তার সব কখাই তার ভাল লাগেনি। তবে কিছু কথা তার ভাল লেগেছে। আর তাই সবার সাথে কথা বলতে এবং Class perform করতে সে তার মুখের নেকাব খুলে দিল। এটা একটা ভাল দিক। কিন্তু প্রথম প্রথম নেকাব খুলতে তার খুব খারাপ লাগত। কারণ এতদিন নেকাব দিয়েছে এখন হঠাৎ করে..। যাইহোক কয়েকদিন পর আর তার কিছু মনে হল না।
এবার কিছুদিনপর সাবিহা ভাবল এত গরমে বোরখা পরার কি দরকার বড় হাতাওয়ালা জামা পরলেই তো হয়। সাবিহা বোরখা খুলে বড় জামা পরতে লাগল। এটাও ভাল তবে এটা করতেও তার প্রথম প্রথম খারাপ লেগেছিল। তবে কিছুদিনপর আর তার কিছু মনে হল না।
এবার সাবিহা ভাবল মাথায় কাপড় দেয়ার কি দরকার। কেমন হুজুর হুজুর লাগে তাছাড়া মাথায় কাপড় না দিয়েও তো শালিন থাকা যায়। এটা করতেও তার প্রথম প্রথম খারাপ লেগেছিল তবে আগের মত অত খারাপ লাগেনি। তারপর সাবিহা ভাবল এত লম্বা জামা ভাল লাগে না। সে জামা শর্ট করল অর্থাৎ শর্ট কামিজ। এবার তার খারাপ লাগেনি। বরং যুগের সাথে তাল মিলাতে পেরে সে ভীষণ খুশি।
এবার সাবিহা ভাবল আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আমি যদি জিন্স আর ভতুয়া না পরি তাহলে কিভাবে Modernহলাম। ইউরোপ আমেরিকার মানুষ কত উন্নত। তাদের কথায় পৃথিবীর মানুষ ওঠে আর বসে। তাদের মত যদি না হতে পারি তাহলে জীবনের সার্থকতা থাকল কোথায়।
সাবিহা তার দৃষ্টিতে Modern হয়েছে। পাশ্চাত্যকে সে অনুসরণ করার চেষ্টা করেছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নত তা আমরা সবাই মানি। কিন্তু পাশ্চাত্য কি নৈতিকতায় উন্নত? সভ্যতায় (পর্দা) উন্নত? সাবিহা খুব ভাল করেই জানে যে পাশ্চাত্যে জেনা, ব্যাভিচার, ধর্ষণ, হত্যা ইত্যাদি কি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ((১৯৯১ সালে (১৯৯৩ সালের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী) আমেরিকাতে ১.৩ জন প্রতি মিনিটে ধর্ষিতা হয়))।কিন্তু তার পরেও সে কেন তাদের অনুসরণ করছে? আসলে তার ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান কম। আল্লাহর হুকুম অমান্য করলে যে তার শাস্তি হবে এই ভয় নেই। ইসলামের পর্দা সম্পর্কে তার জ্ঞান নেই।
আর ইসলাম সম্পর্কে তার জ্ঞান না থাকার কারণে নেকাব খোলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপে উন্নতি(!)সাধন করে সে আজ Modern হয়েছে এবং Extreme Modern হওয়ার পথে । প্রতিটা ধাপে কিভাবে যে তার বিবেক তালাবদ্ধ হয়ে গেছে তা সে বুঝতেই পারেনি। আল্লাহ নিজেই বলছেন,(এদের অন্তরে আল্লাহ তায়ালা মেরে দিয়েছেন এবং এরা নিজেদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। সূরা মুহাম্মদ:১৬)। আর এই তালা খুলতে না পারার ফলে আজ তার এত উন্নতি(!) এমনকি সে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নামও দিয়েছে। আর এভাবে নিজেকে যে ধীরে ধীরে পন্যে পরিনত করেছে তাও সে বুঝতেই পারেনি।
সে আরও বুঝতে পারেনি ধর্ষণ, জেনা, ব্যাভিচার, না পাওয়ার মানসিক বেদনা, কন্যাদায়গ্রস্ততা ও যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা, নারীদের আত্নহত্যার হিড়িক, বিবাহ বিচ্ছেদ ও নারী অপহরণ ইত্যাদি হওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণের মধ্যে যে নারী পুরুষ উভয়ের বেপর্দাও একটি অন্যতম প্রধান কারণ সেটাও।
নারী পুরুষ উভয়ের বেপর্দার কুফল যে কতটা ভয়াবহ তা আমরা ইংরেজ পন্ডিতদের ভবিষ্যতবাণী থেকেই বুঝতে পারি। তারা নিজেরাই বলেন এক সময় মানুষের পোষাক হবে গাছের ছাল আর লতাপাতা। তারা বর্তমান যুগের পোশাকের ধরণ এবং তা যেভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা দেখেই এমন ভবিষ্যতবাণী করেছেন। তাহলে সাবিহার টার্গেট কি ভবিষ্যত প্রজন্মকে গাছের ছাল আর লতা পাতা পরায়ে সভ্য(!)করা।
যাইহোক সাবিহার অভিযোগ ছেলেরাতো সব ঢেকে রাখে না, তাহলে মেয়েদের ঢাকতে হবে কেন? তাছাড়া ছেলেরা তাদের দৃষ্টি নত রাখলেই পারে। সাবিহাকে ভাবতে হবে ছেলেদের ও মেয়েদের শারিরীক ও মানসিক ব্যাপারটা এক রকম নয়। যদি একরকমই হত তাহলে কন্যাদায়গ্রস্ততা, পুরুষ কর্তৃক এসিড নিক্ষেপ, স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা, নারীদের আত্নহত্যার হিড়িক, বিবাহ বিচ্ছেদ ও নারী অপহরণ এর পরিবর্তে শুনতাম পুরুষদায়গ্রস্ততা, নারী কর্তৃক এসিড নিক্ষেপ, স্ত্রী কর্তৃক স্বামী হত্যা, পুরুষদের আত্নহত্যার হিড়িক, বিবাহ বিচ্ছেদ ও পুরুষ অপহরণ । তাছাড়া কেউতো চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না। আর একটা মানুষ কতক্ষণ দৃস্টি নত রাখতে পারে যেখানে শয়তান ডান, বাম, সামনে, পিছন সব দিক থেকে প্রভাবিত করে। আসল কথা উভয়কেই পর্দা মানতে হবে ও দৃস্টি নত রাখতে হবে।
সাবিহার আর একটা প্রশ্ন একজন মনের মানুষ (boy friend)খাকলে সমস্যা কি? উত্তরটা কোরআনেই আছে। সূরা বনী ইসরাইলের ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে-তোমরা জেনার নিকটবর্তী হইও না। নিশ্চয়ই তা একটি বেহায়া পন্থা এবং অসভ্যতার দিকে যাওয়ার মতো একটা খারাপ রাস্তা।“
প্রকৃত জেনার পূর্বে আনুষঙ্গিক জেনার শ্রেণীবিভাগ-
১. কামভাবে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের দিকে তাকানো চোখের জেনা,
২. কন্ঠস্বর শোনা কানের জেনা,
৩. হাত দিয়ে স্পর্শ করা হাতের জেনা,
৪. কারো দিকে দুই পা অগ্রসর হওয়া পায়ের জেনা,
৫. কারো কথা মনে মনে চিন্তা করা মনের জেনা,
৬. মোবাইলে কথা বলা, মিস কল আরsmsদেয়াও মনের জেনা,
৭. Affairকরা। কারণ Affairএর ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো আসবেই। বেপর্দা যেমন ধীরে ধীরে সমাজকে খারাপের দিকে নিয়ে যায় তেমন অবিবাহিত জীবণে প্রেম ভালবাসাও সমাজকে খারাপের দিকে নিয়ে যায়।
রাসুলের বানী: আল্লাহ ও পরকালের প্রতি যার ঈমান আছে সে যেন কোন নারীর সাথে এভাবে নিভৃত একাকীত্বে সাক্ষাত না হয় যে তথায় কোন মুহররম পুরুষ বা স্ত্রীলোক নেই। কেননা এরূপ সময়ে এ দুই জনের মধ্য তৃতীয় ব্যক্তি হিসাবে উপস্থিত থাকবে শয়তান আর শয়তানের কারসাজি তো সকলেরই জানা আছে।
তাই প্রকৃত জেনা যাতে না হয় তার জন্য জেনার পূর্ববর্তী অবস্থার প্রতি সতর্ক থাকতে হবে।
সাবিহা যদি ইসলামকে tradition হিসাবে না নিয়ে ইসলাম সম্পর্কে জানত, বুঝত ও ভালবাসত তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর এভাবে তার পোশাকের পরিবর্তন হত না। সে বড়জোর নেকাবই খুলত তার বেশি কিছু করত না কারণ ইসলাম তা সমর্থন করে না। সে এটাও বুঝত আজ যদি সে মাথায় কাপড় না দেয়া শালীনতা মনে করে তাহলে তার মেয়ে প্যান্ট শার্ট পরাকে শালীনতা মনে করবে। কারণ সাবিহার মা মাথায় কাপড় না দেয়াকে শালীনতা মনে করত না, মাথায় কাপড় দেয়াকেই শালীনতা মনে করত। আর এভাবেই একটি সমাজ ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যায়। একদিনেই খারাপ হয় না। তাই সমাজকে খারাপের দিকে নয়, ভালোর দিকে নিতে সাবিহাকে মনের তালা খুলতে হবে। ইসলাম চর্চা করতে হবে। পর্দা মেনে চলতে হবে। তবে পর্দা মানে যে শুধু বোরখাই পরতে হবে এমনটি নয়। অন্যভাবেও পর্দা করা যায়। আসল কথা ইসলাম সম্পর্কে জানা, বুঝা, মানা এবং পর্দা কেন, কিভাবে, এর গুরুত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে এবং খোদাভীতিকে মনের মধ্যে সদা জাগ্রত রাখতে হবে।
5 comments:
সুন্দর বিষয়, চিন্তা করার মত.....
ট্র্যাডিশনের বাইরে জ্ঞানটা থাকতে হবে। মূলত এটিই মানুষকে রেগুলেট করে। ইসলামের জ্ঞান ভালোমত নিতে পারলে এক্সপ্লয়েট হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এক্ষেত্রে আমাদের দেশের ধমর্প্রাণ পিতামাতা খুব কমই সচেতন। কেবলমাত্র সংগঠন এখন পর্যন্ত পজিটিভ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।
আপনি খুব ভালো লিখেন ... নিয়মিত লেখার অনুরোধ রইলো । সম্ভব হলে আরো বৃহত্তর অংগনে.. আরো বেশি পাঠকের জন্য লিখবেন...
খুব ভাল লেখেছেন। অনেকদিন পর এধরনের ভাল লেখা পড়লাম।
লেখা চালিয়ে যান।
ভাল লেগেছে! আসলে লেখালেখির অভ্যাস নাই তো,তাই বেশিকিছু ভাবতে পারি না। আমার আশেপাশে যা দেখি তাই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়।
Post a Comment